nishat

স্টুডেন্ট লাইফে যে দশটা কাজ করতেই হবে…

স্টুডেন্ট লাইফে যে দশটা কাজ করতেই হবে
১. ইনকাম এবং পার্সোনাল মানি ম্যানেজমেন্ট: তুমি কোটিপতির সন্তান হলেও- স্টুডেন্ট লাইফে তোমাকে কিছু না, কিছু ইনকাম করতেই হবে। নিজের স্কিল, নিজের মেধা, নিজের শ্রম দিয়ে অল্প হলেও ইনকাম করার চেষ্টা করতে হবে। এতে রেস্পন্সিবিলি কিভাবে নিতে হয়। অন্যকে কিভাবে সার্ভ করতে হয়। কাজ দিয়ে হ্যাপি রাখতে হয় সেটা শিখবে। এই ইনকাম টিউশনি দিয়ে, কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিয়ে, পার্টটাইম চাকরি, ভিডিও এডিটিং, ডিজাইন, ওয়েবসাইট তৈরি, কনটেন্ট রাইটিং, এফিলিয়েট মার্কেটিং, এফ-কমার্স, ডিজিটাল মার্কেটিং, বা অন্য কোন কিছু দিয়ে হতে পারে। তারপর নিজের পকেট খরচ নিজে চালানোর চ্যালেঞ্জ নিবে। এতে পার্সোনাল ফাইন্যান্স এবং মানি ম্যানেজমেন্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেসন ঠেকে ঠেকে শিখবে। যেটা কোন ভার্সিটি তোমাকে শেখাবে না।
.
২. বেসিক কমিউনিকেশন স্কিল: তুমি দেশের সেরা ভার্সিটি বা সবচেয়ে খারাপ কলেজে পড়ো না কেন। ইংরেজি নরমাল কথা বার্তা চালিয়ে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতেই হবে। নিজের সম্পর্কে বা কোন একটা টপিক সম্পর্কে এক দেড় পাতা ইংরেজিতে লেখার যোগ্যতা তৈরি করতে হবে। কেউ ইংরেজিতে একটা ইমেইল বা মেসেজ দিলে সেটার রিপ্লাই দিতে জানতে হবে। ইউটিউব বা অন্য কোথাও ইংরেজি টিউটোরিয়াল দেখে বুঝতে পারার সামর্থ্য লাগবেই লাগবে। প্রচুর ফ্রি কোর্স আছে ইংরেজিতে। সেগুলা দেখে বুঝতে এবং কাজে লাগানোর এবিলিটি তৈরি করতে হবে।
.
৩. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট/ লিডারশীপ: বন্ধুদের ঘুরতে যাওয়া হোক কিংবা ক্যাম্পসে কোন ইভেন্ট হোক- সেটা ইফতার পার্টি, বৈশাখী মেলা, rag পার্টি, জব ফেয়ার, এলামনাই রিউনিয়ন। যেটাই হোক তোমাকে ইভেন্টের একজন মেইন অর্গানাইজার হতেই হবে। তাহলে তুমি বুঝতে পারবে কিভাবে বিভিন্ন ধরনের মানুষ হ্যাডেল করতে হয়। কিভাবে বাজেট করতে হয়। প্লানিং করতে হয়। মানুষের কাজ থেকে হেল্প আদায় করতে হয়। ১৫-২০ টা জিনিস একসাথে কম্বাইন করার প্রাকটিক্যাল লিডারশীপ ট্রেনিং ফ্রি ফ্রি আর কোথাও পাবা না।

আরেকটু বেশি কনফিডেন্ট হতে চাইলে মিনিমাম ৫০জন মানুষের সামনে বক্তৃতা, ডিবেট, উপস্থাপনা বা নাচ, গান/নাটক কিছু পারফর্ম করার চেষ্টা করবে। এতে তোমাকে পাবলিকের সামনে দাঁড়ানোর ভয় কেটে যাবে।
.
৪. গুগল সার্চ এবং chatGPT: কিভাবে ইন্টারনেট থেকে দরকারি জিনিস খুঁজে বের করবে সেই এবিলিটি তোমাকে তৈরি করতে হবে। লেটেস্ট যে টেকনোলজি (chatGPT ) সেটা ইউজ করা জানতে হবে। যাতে তোমার ফিল্ডের কোন টপিক এর রিসার্চ বা অন্য ফিল্ডের কোন কিছু খুঁজে বের করতে দিলে সেটা খুঁজে বের করতে পারো। গুছিয়ে একটা রিপোর্ট তৈরি করতে পারো। দরকার হলে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন বা গুগল স্লাইড দিয়ে প্রেজেন্টেশন বানিয়ে ফেলতে পারলে তো কোন কথা ই নাই।

আর তুমি যেই লাইনেই পড়ো কেন। কিছু না কিছু সফটওয়্যার তোমার লাগবেই। সেগুলা কিভাবে ইউজ করে। কিভাবে কাজে লাগায় সেটা জানতেই হবে। দরকার হলে ইউটিউবে সার্চ দিয়ে টিউটোরিয়াল খুঁজে বের করে শিখে ফেলবে।
.
৫. এরিয়া অফ ইন্টারেস্ট: তুমি যে সাবজেক্টেই পড়ো না কোন। যে ফিল্ডেই পড়ো না কেন। তোমাকে সেই ফিল্ডের যেকোন একটা এরিয়াতে তোমার টেক্সট বইয়ের/ ক্লাসের পড়ার বাইরে বেশি জানতে হবে। সেটার জন্য তুমি এক্সট্রা বই পড়তে পারো। নিজের ভিতরে কিউরিসিটি গ্রো করতেই হবে। তারপর যা যা শিখছো সেগুলা একটা একটা করে সামারি লিখতে হবে। সেই সামারি কোথাও না কোথাও পাবলিশ করার চেষ্টা করবা। ডিপার্টমেন্টের ম্যাগাজিন। সেটাও না পারলে বিশ্বের সেরা পাবলিশার ফেইসবুকে পাবলিশ করে দিবা। দুই একজন বন্ধু টিটকারি মারলেও তুমি কী কী শিখছো সেটা ফেইসবুকে পোস্ট করে দিবা।
.
৬. বেস্ট ফ্রেন্ড: তোমার একজন বেস্ট ফ্রেন্ড বানাতেই হবে সম্মানবোধ ও শালীনতার যায়গা বজায় রেখে। একটা ফ্রেন্ড সার্কেল থাকবে। তবে ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে বা বাইরে তোমার একজন বেস্ট ফ্রেন্ড থাকবেই। যার সাথে মিলে তুমি অনেক কিছু করবে। অনেক জায়গায় যাবে। দুজনের ইন্টারেস্ট লেভেল কাছাকাছি থাকবে। একজন আরেকজনকে হেল্প করবে। এই ক্লোজনেস তোমাকে ডাউন টাইমে হেল্প করবে। ফিউচার ঠিক করতে হেল্প করবে। কারণ সব বন্ধুর সাথে সব শেয়ার করা যায় না।
.
৭. নেটওয়ার্কিং: তুমি যে ফিল্ডে কাজ করতে চাও। সেই ফিল্ডের কমপক্ষে দশজনের সাথে তোমার কানেকশন থাকতে হবে। তারা হতে পারে তোমার সিনিয়র। অন্য ভার্সিটির সিনিয়র বা অন্য কোথাও থেকে পাশ করা প্রফেশনাল হতে পারে। দেশের বাইরের কেউ হতে পারে। হয়তো কোন ওয়ার্কশপ বা সেমিনারে এ গিয়ে তাদের সাথে পরিচয় হইছে। তাদের সাথে তোমার যোগাযোগ থাকবে। তারা জানবে তুমি কোন কোন জিনিসে ভালো। তোমার প্যাশন কি। ফিউচার প্ল্যান নিয়ে তাদের সাথে ডিসকাস করবা।
.
৮. বিল্ড ইউর রেজুমি: চার বছর ভার্সিটি পড়ার পর যদি দেড় পাতা রেজুমি লেখার মেটেরিয়াল তোমার লাইফে না থাকে তাইলে তুমি কি করলা, নাবিলা? তোমাকে এক্সট্রা কারিকুলার এর সাথে জড়িত থাকতেই হবে। যেকোন একটা অর্গানাইজেশনের সাথে। সেরকম কোন অর্গানাইজেশন না থাকলে তুমি এবং তোমার বন্ধুরা মিলে একটা দিয়ে ফেলবে। সিনিয়র ভাইদের কাছ থেকে তাদের সিভি/রেজুমি জোগাড় করে ফেলবা। দরকার না থাকলেও সেকেন্ড ইয়ারে/থার্ড ইয়ারে তোমার একটা রেজুমি বানিয়ে ফেলবে। LinkedIn এ গিয়ে দুই একটা জব সার্কুলার দেখে ঠিক করবে তারা কী কী চায়। তাহলে বুঝতে পারবে কোন কোন জায়গায় গ্যাপ আছে। তখন সেই গ্যাপগুলার এরিয়াতে ইমপ্রুভ করে ফেলবে।
.
৯. এক্সটা নলেজ: পাঠ্য বইয়ের বাইরের জগতে তোমাকে হানা দিতেই হবে। সেটা হতে পারে কিছু বিখ্যাত বই পড়ে (বাংলায় বা ইংরেজিতে)। উপন্যাস বা আত্ন উন্নয়নমূলক বা অন্য কোন ক্যাটাগরির বই। হতে পারে কিছু অস্কার বিজয়ী সিনেমা। মোস্ট পপুলার TED talks গুলা দেখলে। অন্য ডিপার্টমেন্টের ছেলেপুলেরা কী কী নিয়ে পড়তেছে সেটা নিয়ে মাঝে মধ্যে গল্প করলা। তাইলে তুমি তোমার জগতের বাইরের কিছু জিনিস সম্পর্কে অবগত হলে। এর মধ্যেই হয়তো তুমি তোমার ইন্টারেস্ট খুঁজে পাবে। সেটাতে আরো ফোকাস করলে সেই ফিল্ডে সিরিয়াস একটা স্কিল তৈরি করে ফেলতে পারলেও তো কথা ই নাই।
.
১০: নিজেকে গাইড করার এবিলিটি: ভার্সিটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট হওয়ার জায়গা। এইখানে ফ্যামিলি তোমাকে গাইড করবে না। তাই নিজের টাইম ম্যানেজমেন্ট, ইমোশন ম্যানেজমেন্ট, রিলেশন ম্যানেজমেন্ট এইগুলা নিজের ভিতরে ডেভেলপ করতে হবে। কোন একটা রুটিন বানিয়ে সেটা ফলো করার এবিলিটি। কোন টার্গেট সেট করে সেটার পিছনে লেগে থাকার সামর্থ তৈরি করতে হবে। অপরিচিতদের সাথে কথা বলতে পারা। ধীরে ধীরে প্রফেশনাল লাইফের দিকে যাওয়া। লাইফ গুছানোর কথা চিন্তা করতে হবে।

একটা ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে। টিউশনি করে হোক বা যেভাবেই হোক পাশ করার পর ছয় মাস চলার মতো টাকা তোমার ব্যাংকে থাকতে হবে। কারণ পাশ করার পরের দিনই সবাই চাকরি পেয়ে যাবে না। তোমাকে দুই জোড়া ফর্মাল ড্রেস কিনে রাখতে হবে। ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার সময় কাজে লাগবে।
.
মনে রাখবে—তোমার ভার্সিটি তোমাকে গড়ে দিবে না। ভার্সিটি একটা প্লাটফর্ম। সেই প্লাটফর্ম কাজে লাগিয়ে নিজেকে গড়ে নেয়ার দায়িত্ব তোমার।

 

mustafa sir

মোঃ মোস্তফা রাহমান
তথ্য ও প্রযুক্তি শিক্ষক,

মাদবারহাট ইসলামিয়া ফাযিল (স্নাতক) মাদ্রাসা
ওয়েব এন্ড সফটওয়্যার ডেভেলপার, C360SOFT.AI, INDIA

Copyright © সুফিয়া নূরীয়া ফাযিল মাদ্রাসা All rights reserved | Developed by Mustafa Rahaman